ঢাকা রবিবার, ১২ মে, ২০২৪

সিটির পর উপজেলা নির্বাচনেও ‘কৌশলী’ এমপি বাহার

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪

সিটির পর উপজেলা নির্বাচনেও ‘কৌশলী’ এমপি বাহার

ভোটের মাঠে নানা কারণেই আলোচনায় আসেন কুমিল্লা-৬ (সদর-সিটি করপোরেশন) আসনের টানা চারবারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের দুইবারের সভাপতি।

গত ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেন এমপি বাহারের মেয়ে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। ওই নির্বাচনের সময় বাহারকে নিয়ে মিডিয়ায়ও ছিল সরব আলোচনা।

এর আগে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রয়াত অ্যাডভোকেট আফজল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন তিনি। এবার উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলায় নিজের অনুসারী তিন প্রার্থীকে বিনা ভোটে জয়ী করতে এমপি বাহার দলের বর্ধিত সভা করে ‘কৌশলে’ প্রার্থী চূড়ান্ত করে নেন। দলীয় নেতারা বলছেন, তিনি এমন উদ্যোগ না নিলে দল থেকে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়তেন। 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা হয়।

সভায় উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই করা হয়। ৫ শতাধিক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে গোপন ভোটে চেয়ারম্যান পদে আমিনুল ইসলাম, কণ্ঠভোটে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আহমেদ নিয়াজ পাবেল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হোসনেয়ারা বকুলকে একক সমর্থন দেওয়া হয়। পরে ওই তিনজন ছাড়া আর কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা পংকজ বড়ুয়া বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় তিনজনই বিনা ভোটে জয়ী হতে যাচ্ছেন।’ প্রার্থীদের মধ্যে আমিনুল ও হোসনেয়ারা ২০১৯ সালের নির্বাচনেও বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আহমেদ নিয়াজ এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন।

গত সংসদ নির্বাচনে বাহারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে আঞ্জুম সুলতানা সীমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ২০১৭ সালের কমিটিতে সীমা সহসভাপতি থাকলেও ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর ঘোষিত কমিটিতে তাঁকে রাখা হয় সদস্য পদে। দুই পরিবারে রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিভক্তি। গত সিটি নির্বাচনে সীমার অনুসারীরা ডা. সূচনার পক্ষে ভোটের মাঠে ছিলেন না। উপজেলা নির্বাচনে সীমা অনুসারীদের কেউ প্রার্থী না হওয়ার বিষয়ে সীমা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁর অনুসারী একাধিক নেতা বলেছেন, ‘গত সংসদ ও সিটি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে ও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ না থাকায় সীমা অনুসারীদের কেউ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হননি।’

এদিকে বিএনপি ও জামায়াত থেকে একাধিক প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও শেষ সময়ে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তারাও প্রার্থী হননি। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, ‘দল থেকে কেউ কেউ প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল, তবে কেন্দ্র থেকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত আসায় কেউ প্রার্থী হননি।’ মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমদাদুল হক মামুন বলেন, ‘প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।’

বিনা ভোটে জয়ী হতে যাওয়া অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল বলেন, ‘মহানগর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৫ শতাধিক কাউন্সিলরের সমর্থনে দল থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এতে দল থেকে অন্য কেউ প্রার্থী হননি। দলের ঐক্য ঠিক রেখে এটা আমার নেতার (এমপি বাহার) একটি রাজনৈতিক কৌশল ও বিচক্ষণতা।’  

এর আগে ২০২১ সালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডের ৬০ জন সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। পরের বছর মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১ ইউপিতে সাধারণ সদস্য (মেম্বার) ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের ১৪৩টি পদের মধ্যে ১২৯টিতেই বিনা ভোটে জয়ী হন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ২০২১ সালে লাকসাম পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলররা বিনা ভোটে জয়ী হন। ২২ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনেও ওই দুই উপজেলায় দুই সদস্য পদে বিনা ভোটে বিজয়ী হন। বিজয়ীদের সবাই কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের  সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারী।

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!