ঢাকা রবিবার, ১২ মে, ২০২৪

দ্রব্যমূল্য, সরকারের অগ্রাধিকার ও একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিমন্ত্রী

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪

দ্রব্যমূল্য, সরকারের অগ্রাধিকার ও একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিমন্ত্রী

ফাইল ফটো

করোনা অতিমারি সমগ্র বিশ্বকে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়। তার পর থেকে সারা বিশ্বে একটা অর্থনৈতিক সংকট বিরাজমান। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে ঘোরতর সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়। দেশে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে, মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। কোনো কোনো দেশে তা গত ৫ দশকের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বদা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে দ্রব্য মূল্যের লাগাম টেনে ধরার প্রচেষ্টা ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয় এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আহসানুল ইসলাম টিটুর মতো একজন কর্মস্পৃহ, উদ্যোগী ও প্রজ্ঞাবান মানুষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ইশতেহারে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ১১টি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটিই ছিল- দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বাজার ব্যবস্থাপনা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সুস্পষ্টভাবে ইশতেহারে উল্লেখ ছিল। সেখানে ২টি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তা হলো- ১) বাজার মূল্য ও আয়ের মধ্যে সংগতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ২) যেসব পণ্যের বাজার দেশীয় উৎপাদন ও সরবরাহকারীর ওপর নির্ভর করছে, সেগুলোর ন্যায্যমূল্য প্রতিষ্ঠা করা এবং ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পৌছানোর সর্বোচ্চ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ইশতেহারের অগ্রাধিকার অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিলেও তার প্রতিফলন বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিলক্ষিত হয়নি। সেখানে কারণ হিসেবে দেখা যায়- লোহিত সাগরে হুতিদের লক্ষ্য করে একযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হামলা চালায়। যে কারণে পণ্যবাহী জাহাজের ভাড়া বেড়ে যায় এবং তার প্রভাব পড়ে দ্রব্যমূল্যের উপর। সবকিছু পর্যালোচনা করে কয়েকদিন আগে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে ২০২৪ সাল জুড়ে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বর্তমান থাকবে। তবে নতুন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের প্রজ্ঞা ও বাস্তবতার সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। সকল জায়গায় তাঁর সরব উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। যে সিন্ডিকেটকে সবাই চিরস্থায়ী গডফাদার হিসেবে গণ্য করে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিমন্ত্রী সোচ্চার হলেন। তাঁর সকল কর্মপরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা ছিল সকল নেতিবাচক পূর্বাভাসকে মিথ্যা প্রমাণিত করা। এটা করতে তিনি শতভাগ সফল হবেন কিনা, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে তিনি যে তার কর্মক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছেন বর্তমান বাজার পরিস্থিতি তার সাক্ষ্য দেয়। 

চলতি রমজানের শুরুর দিকে দ্রব্য মূল্যের চোখ রাঙানিতে অস্থির হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িতদের প্রতিপক্ষ ভাবতে থাকে সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রল করা হয়। যেন ব্যবসায়ীরা এই সমাজের বাইরের মানুষ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। এর কারণ হলো, আয়ের অধিকাংশই ব্যয় করতে হয় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে। সবাই ভেবেছিল দ্রব্য মূল্যের দাবনীয় শক্তির কাছে যারপরনাই পরাজিত হতে হবে এবং রমজানে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি চলমান থাকবে। সেক্ষেত্রে রমজান মাসে দ্রব্য মূল্য স্থিতিশীল রাখাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। শুরু থেকেই সরকার সচেতন ছিল এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী শুরু থেকেই সরকার কালোবাজারি ও মজুতদারির বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়। সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে জনগণকে মোটামুটি স্বস্তির জায়গা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। অনেক সময় দেখা যায়, দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তড়িৎ গতিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যা হিতে বিপরীত হয়। এর কারণ হলো বাজারের নিজস্ব একটা শক্তি আছে। অযৌক্তিকভাবে সেই শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বিপরীতটা ঘটে। বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বাজারের ভেতরের ও বাইরের প্রভাবককে বিবেচনায় নিয়ে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন। আর এই সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট ধৈর্য ও স্থিতিশীল ছিলেন। ফলে এবারের রমজানে তেমন কিছু ঘটে নাই। এমনকী প্রতিমন্ত্রী একটা ক্ল্যারিক্যাল ভুলের জন্য অবলীলায় সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রচলিত ও অপ্রচলিত উভয় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে তিনি দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হন। দ্রব্যমূল্যের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়নি, বরং তা অনেক ক্ষেত্রে কমে এসেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাস্কফোর্সের বৈঠক করে ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কোথায় এ সকল পণ্য অধিক মূল্যে যাতে বিক্রি না হয় সেজন্য নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা রাখা হয়। নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রিতে ক্রেতার সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো ৩৩৩ হট লাইন চালু করা হয়। মূল্য কমানোর জন্য চিনি, তেল, ছোলা ও খেঁজুরের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছিল। পাশাপাশি চালু রয়েছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রয়। সারা দেশে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি ঢাকায় ৩০টি স্পটে ভর্তুকি দিয়ে মাছ, মাংস ও ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশনের ৪টি স্থানে স্থায়ীভাবে ভর্তুকি দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি এবং রাজধানীর শ্যামলীতে কম মূল্যের বাজার চালু করা হয়েছে। 

রমজানের শেষের দিকে এসে যদি আমরা বাজার পরিস্থিতির দিকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাই, দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনগণ স্বস্তিতে না থাকলেও অস্বস্তির জায়গা প্রায় শূন্যের কোটায়। বৈশ্বিক সংকটের কারণে দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি হলেও সরকার সেটা এড়িয়ে যায়নি। বরং জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য সরকার সর্বদা তৎপর ছিল। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব জনবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার। আর শেখ হাসিনার নির্দেশনার সফল বাস্তবায়নের জন্য একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে মাঠে সরব ও সচেতন থেকেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রত্যেক দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা যদি শভভাগ তৎপর থাকেন তাহলে আমাদের অধিকাংশ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারে জনগণ। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এই রমজান মাসে তুলনামূলক স্বস্তিতে রেখে রোজা পালনে সর্বাত্মক সচেষ্ট থাকার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। 

আনিসুর রহমান মোল্লা 
সাংবাদিক।

বার্তাজগৎ২৪/ এম এ

Link copied!