ঢাকা শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

‘এ তবে কিসের আলামত?’

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৪

‘এ তবে কিসের আলামত?’

১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২৩তম দিন। অগ্নিঝরা মার্চের এই দিনে বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ সারা দেশ। একদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পরামর্শক দল প্রহসনের আলোচনা চালাচ্ছিল, অন্যদিকে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সামরিক জান্তা। বাঙালি ভাবতেও পারেনি মাত্র এক দিন পর তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক ভয়াবহ বিভীষিকাময় রাত।


এদিকে আলোচনার নামে প্রহসনে ক্ষুব্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘বাংলার উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বরদাশত করা হবে না।’ পরদিন দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তানসহ ঢাকার বেশির ভাগ সংবাদপত্র বঙ্গবন্ধুর ওই হুঁশিয়ারিকেই প্রধান শিরোনাম করে। দৈনিক পাকিস্তানে আট কলাম শিরোনাম ছিল ‘আন্দোলন নস্যাতের চক্রান্ত চলছে: মুজিব’। ইত্তেফাকে ছয় কলাম শিরোনাম ছিল ‘বাংলার উপর কোন কিছু চাপাইয়া দেওয়ার চেষ্টা বরদাশত করা হইবে না’।


ঢাকায় এদিন ইয়াহিয়ার পরামর্শকেরা বৈঠক করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ইয়াহিয়ার কাছে দাবি জানালে কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। ‘বল এখন প্রেসিডেন্টের কোর্টে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে পরদিন দৈনিক সংবাদ শিরোনাম করেছিল ‘অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করা চলবে না: তাজউদ্দীন’।


একাত্তরের এই দিনে করাচি থেকে সোয়াত নামের একটি জাহাজ আসে। এতে ৫ হাজার ৬৩০ টন অস্ত্র আনা হয়। অস্ত্র নামানোর চেষ্টা করা হলে বাঙালি শ্রমিকেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক-পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে শহীদ হন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। দৈনিক পূর্বদেশ পরদিন খবরটি ছেপেছিল ‘চট্টগ্রাম বন্দর জনতা ঘিরে রেখেছে’ শিরোনামে।

এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা একে একে ঢাকা ত্যাগ করতে শুরু করেন। ভুট্টোর সফরসঙ্গী ১৩ জনের ৭ জনই এদিন ঢাকা ছাড়েন। পরদিন ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় নিচের দিকে এ খবর ছাপা হয় ‘পঃ পাক নেতাদের করাচী যাত্রা’ শিরোনামে।

২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী তিনটি গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চট্টগ্রামেও হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় ১০০ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি লোক আহত হয়। রাজধানীতেও বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালায় অবাঙালিরা।

এসব নিয়ে পরদিন দৈনিক পাকিস্তানে দ্বিতীয় প্রধান প্রতিবেদন ছাপা হয় ‘সৈয়দপুর ও চট্টগ্রামে বহু হতাহত’ শিরোনামে। ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনামের নিচে ‘এ তবে কিসের আলামত?’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চরমতম সঙ্কট-সন্ধিক্ষণে দাঁড়াইয়া প্রেসিডেন্ট জেনারেল মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান যখন সদলবলে ঢাকায় বসিয়া সাড়ে সাত কোটি সত্যাগ্রহী বাঙ্গালীর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবুর রহমানের সহিত আলোচনায় রত এবং সে আলোচনার অগ্রগতির সংবাদে মানুষ যখন অনেকটা আশান্বিত, ঠিক তখনই আবার এ অশুভ সঙ্কেত কেন, গতকল্য (বুধবার) রাজধানী ঢাকার গণমনে এই প্রশ্ন না জাগিয়া পারে নাই।

তেইশে মার্চের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচী অনুযায়ী রাজধানী নগরীর মহল্লায় মহল্লায় যায়, সরকারী অফিস-আদালতে “বাংলাদেশের পতাকা” উড়িল, কোথাও কোন বিপত্তির কারণ ঘটিল না, অথচ মীরপুর হইতে সংবাদ আসিল, একটি গৃহশীর্ষ হইতে বাংলাদেশের পতাকা অপসারিত হইয়াছে, গভীর রাতে অসংখ্য বোমার আওয়াজ শ্রুত হইয়াছে, বাংলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব কাইউম শরীরের তিন স্থানে ছোরার আঘাতসহ এবং ২নং সেকশনের জনৈক প্রৌঢ় বাঙ্গালী পেটকাটা অবস্থায় হাসপাতালে নীত হইয়াছেন এবং একটি গৃহে অগ্নিসংযোগও করা হইয়াছে।’

একাত্তরের এই দিনে যশোর ইপিআর সদর দপ্তরে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। পরদিন দৈনিক পাকিস্তানের প্রথম পাতায় খবরটি ছাপা হয় দুই কলাম শিরোনামে।

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!