ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ঈদ সালামির’ নামে ছাত্রলীগের ৬ নেতার চাঁদাবাজি

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪

ঈদ সালামির’ নামে ছাত্রলীগের ৬ নেতার চাঁদাবাজি

ঈদ সালামির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের ৬ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাজধানীর বঙ্গবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী, আনন্দবাজার এলাকার একটি খাবার হোটেল ও গোলাপশাহ মাজার এলাকায় লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে এ চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। তবে অভিযুক্তরা বলছেন, তারা চাঁদাবাজি করেননি। আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তারা একজনের সঙ্গে ঈদের আগে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তিনি সালামি দিয়েছেন। যদিও চাঁদাবাজির ভাগাভাগি সংক্রান্ত একাধিক অডিও এবং কলরেকর্ড কালবেলার হাতে এসেছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ আল আজাদ, অর্থ সম্পাদক জাহিদ হাসান রুবেল, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বাঁধন, সমাজসেবা সম্পাদক আসাদুল আসাদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হুমায়ুন কবির সবুজ এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাঈনুদ্দিন চৌধুরী বাপ্পী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা সবাই হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এবং কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতার অনুসারী। তাদের মধ্যে আলিফ ও সবুজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী; জাহিদ ও আসাদ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী; বাপ্পী ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী এবং বাঁধন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার বঙ্গবাজারের লাইনম্যান লিটনকে ফোন করে চাঁদা দাবি করেন আলিফ। তখন লিটন টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বঙ্গবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর তালিকা ও ফোন নম্বর আলিফকে সরবরাহ করেন। সেই তালিকা ধরে পরদিন বুধবার আলিফ, সবুজ এবং বাপ্পীর নেতৃত্বে জাহিদ, আসাদ ও বাঁধন বঙ্গবাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। এ ছাড়া তারা কার্জন হলের ফুলের দোকান, অমর একুশে হলের সামনের আল মাসুদ ক্যাফে এবং গোলাপশাহ মাজার সংলগ্ন লেগুনা স্ট্যান্ডে গিয়েও চাঁদা দাবি করেন।

হাতে আসা একটি অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, আলিফ ব্যবসায়ীদের কাছে আদায় করা টাকা ভাগাভাগির হিসাব দিচ্ছেন হলের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাদের কাছে। এ সময় অভিযুক্ত অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। নেতারা কত টাকা উঠেছে জানতে চাইলে আলিফ তাদের জানান, ১০ হাজার টাকা উঠেছে। একেক গ্রুপের ভাগে পড়েছে আড়াই হাজার টাকা করে। তখন এক নেতা বলেন, ‘মাত্র ১০ হাজার টাকা উঠছে, এইটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে?’ তখন আলিফ বলেন, ‘আমার কথা বিশ্বাস না হইলে ব্যবসায়ীদের কাছেই জিজ্ঞাসা করেন।’ তখন এক নেতা বলেন, ‘শুধু ব্যবসায়ীই নয়, জায়গা তো আরও আছে।’ সবুজের উদ্দেশে এক নেতা বলেন, ‘আজকে আলিফ ভাইকে সবার সামনে এইভাবে কথা বলার যে ব্যাপারটা, সেটা কেন আসছে? তুমি ভাবতেছো যে, তুমি আর আলিফ ভাই এই টাকা একা খেয়ে ফেলবা, এই জন্যেই কথা আসছে।’ তখন সবুজ বলেন, ‘টাকা তো ফজলুল হক হলের কথা বলেই আনা হইছে। এই টাকা তো সব গ্রুপই পাবে।’ তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আলিফ বলেন, ‘আমার কথা বিশ্বাস না হলে যেইখান থেকে টাকা আনছি, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। চেক করে দেখতে পারো।’ তখন কয়েকজন বলেন, ‘কোনো গ্রুপই ভাগের টাকা পায়নি। যেহেতু কেউ স্বীকার করতেছে না যে, তারা টাকা নেয়নি সেহেতু টাকা আলিফ ভাই নিয়েছে। টাকার কোনো ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি।’

তখন আলিফ তাদের ভাগের টাকা দিতে চাইলে কেউ টাকা নিতে চায়নি। একজন আলিফকে বলেন, ‘আপনাকে কল দেওয়া হইছে সাড়ে ৮টায় আর আপনি আসছেন ১০টায়। এসে আপনি আড়াই হাজার টাকা দিতেছেন। এই দেড় ঘণ্টায় তো আমি আড়াই লাখ টাকা আনতে পারি। একটা হল থেকে ৬ জন গিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসছে। এইটা কি বিশ্বাসযোগ্য?’

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফজলুল হক হল থেকে তাদের ফোন দিয়ে দেখা করতে চেয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা। নেতারা কত টাকা চেয়েছেন বা কত টাকা দিয়েছেন তা জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে লাইনম্যান লিটন বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ব্যবসায়ী জহির সাহেব, মোহন সাহেব ও সিদ্দিক সাহেবসহ কয়েকজনের নম্বর নিয়ে তাদের কাছে ছাত্রলীগের আলিফসহ একটা গ্রুপ গিয়েছে।’ অভিযোগের বিষয়ে আলিফ আল আজাদ বলেন, ‘কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমি সামনে হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। এ কারণে আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।’

জাহিদ হাসান রুবেল বলেন, ‘আমাদের হলের আশপাশে ওয়ার্ড বা শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। বিভিন্ন কাজে বড় ভাই হিসেবে আমরা তাদের কাছে বিভিন্ন সময় যাই। অন্য কারও কাছে কোনো টাকা চাওয়া হয় নাই।’ মাহিদুর রহমান বাঁধন বলেন, ‘রাজনৈতিক একটি কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদেরকে এই ব্লেইমটা দেওয়া হচ্ছে। আমরা কখনোই এসব চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই।’

আসাদুল আসাদ বলেন, ‘মোহন ভাই আমাদের হলের সাদ্দাম ভাইয়ের অনুসারী আলিফ ভাইকে কিছু টাকা ঈদ সালামি দেওয়ার পর উনার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যান্ডিডেট যারা আছেন তারা বিষয়টিকে ঘোলাটে করেছেন। চাঁদাবাজি হয়নি কোনো।’ মাঈনুদ্দিন চৌধুরী বাপ্পী বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগগুলোর কোনোরকম সত্যতা নেই। কেউ হয়তো চক্রান্ত করে আমাদের নামে মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করছে।’ অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির সবুজকে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়েছি। যিনি টাকা দিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তিনি নিজেই খুশি হয়ে পোলাপানকে ঈদ সালামি দিয়েছেন। এটা নিয়ে ওদের মধ্যেই হয়তো একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, এটা পরে মীমাংসা হয়ে গেছে।’

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!