ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের প্রমাণ দিতে পারেননি বিএমডিএর প্রকৌশলী

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৪

ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের প্রমাণ দিতে পারেননি বিএমডিএর প্রকৌশলী

নামের আগে ‘ড.’ ব্যবহার করেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আবুল কাসেম। কিন্তু তিনি আসলেই ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন কিনা, এর প্রমাণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ তার থিসিস পেপার জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবুল কাসেম তার থিসিস পেপার জমা দিতে পারেননি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ রোববার দুপুরে বলেন, ‘আমরা তার থিসিস পেপার চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি থিসিস জমা দেননি। চাকরিরত অবস্থায় ডক্টরেট ডিগ্রি করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিরও দরকার আছে। তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্রও দেখাতে পারেননি। আমরা আরেকবার তার কাছে জানতে চাইব। এরপরও তিনি যদি এসব জমা দিতে না পারেন তাহলে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেব।’

আবুল কাসেম প্রকৌশলী হিসেবে বিএমডিএতে যোগদান করেন ১৯৯৪ সালে। ২০১০ সাল থেকে তিনি নামের আগে ‘ড.’ লেখা শুরু করেন। আদৌ তিনি পিএইচডি করেছেন কিনা, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। কারণ পিএইচডি পড়াশোনার জন্য তিনি কখনো ছুটি নেননি। পিএইচডি ডিগ্রি ব্যবহার করে তিনি নিজেকে জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করেন। বাগিয়ে নেন পদোন্নতি। বিএমডিএর অনুমোদিত জনবল কাঠামোতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কোনো পদই নেই। অথচ তিনি চতুর্থ গ্রেডে অবৈধ এ পদে আসীন হয়েছেন। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আবুল কাসেমকে এই পদে আপগ্রেডেশন দেওয়া হয়।

এর আগে ২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা পড়ে যে, আবুল কাসেম ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। তখন মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিলেও ধামাচাপা পড়ে যায়। সম্প্রতি ফের অভিযোগটি বিএমডিএকে যাচাইয়ের নির্দেশ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। আবুল কাসেম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে থাকলে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছেন কিনা, অনুমোদন নিয়ে থাকলে তার সনদ ও গবেষণাপত্র (থিসিস) দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া নামের আগে ‘ড.’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছেন কিনা, সেটিও জানাতে বলা হয়। পরে নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ চিঠি দিয়ে এই প্রকৌশলীর কাছে তাঁর থিসিস পেপার ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কাগজপত্র দাখিল করার নির্দেশ দেন।

থিসিস পেপার জমা দিতে না পারার বিষয়ে আজ সোমবার জানতে চাইলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাসেম উল্টো জানতে চান কে বলেছেন যে তিনি থিসিস পেপার জমা দেননি। নির্বাহী পরিচালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জানালে প্রকৌশলী আবুল কাসেম বলেন, ‘তাহলে আর কী বলব! আমি থিসিস পেপার জমা দিয়েছি। তিনি কেন বলছেন তা জানি না। আর আপনারাও তো কোনো দিন ভালো খবর লেখেন না। সব সময় এসব খোঁজেন।’

আবুল কাসেমের ‘ভুয়া’ ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহারের বিষয়ে গত ১৮ মার্চ একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় ‘ভুয়া পিএইচডিধারী প্রকৌশলী কাসেম’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে এখনো আবুল কাসেম নামের আগে ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। সোমবার দুপুরে বিএমডিএর ওয়েবসাইটেও তার নামের আগে ‘ড.’ লেখা দেখা গেছে। দাপ্তরিক ফাইলপত্রেও এ ডিগ্রি লেখা হয়।

আবুল কাসেম গত ১৭ মার্চ দাবি করেছিলেন, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি পিএইচডি করেছেন। ছুটির দিনে ক্লাস করার কারণে কোনো ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। বিদেশি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ শাখা থেকে ডিসট্যান্ট লার্নিং নিয়ে তিনি এই পিএইচডি করেছেন। তবে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ পর্যন্ত কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশীয় শাখাকে পিএইচডি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যাঁরা সেখান থেকে এ ডিগ্রি নিয়েছেন তার কোনো বৈধতা নেই।
 

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!